সৃষ্টিশীল ও সুন্দর মানুষ তৈরীর প্রথম সোপান হল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। হাওড়া জেলার সাঁকরাইল থানার অন্তর্গত এমনই এক স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাউথ সাঁকরাইল হাই স্কুল(উ: মা:)। ১৯৩০ সালে এই প্রতিষ্ঠানের দীপ জ্বালাতে জমিদান করেন মরহুম জানাব ফজলে হক মোল্লা মহাশয়, আর সেই জমিতে এই প্রাণপ্রিয় প্রতিষ্ঠানের বীজ বপন মরহুম সুলতান আহমেদ মহাশয় ও মরহুম গোলাম রশুল মহাশয় | আমার অন্তরের অন্তরস্থল থেকে ওনাদের জানাই বিনম্র শ্রদ্ধার্ঘ্য। এলাকার বহু সমাজসেবী, শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি, অভিভাবক-অভিভাবিকা বৃন্দ, বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীবৃন্দ, বিভিন্ন সময়ে আগত পরিচালন সমিতির সভাপতি ও সদস্য-সদস্যাবৃন্দ, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক, স্নেহের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী, শ্রদ্ধেয় প্রাক্তন শিক্ষক-শিক্ষিকাগন ও শিক্ষাকর্মীবৃন্দের আন্তরিক প্রচেষ্টা, গঠনমূলক উন্নয়নের চেষ্টা, সুপরামর্শ, সক্রিয় সহযোগিতার মাধ্যমে বহু বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে আজ এই বিদ্যালয় ৯৪ বছরে পদার্পণ করেছে। বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের সাথে যুক্ত সকলকে জানাই আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আজ কলম ধরার সুযোগ পেয়ে, ও এই বিদ্যালয়ের একজন প্রাক্তন ছাত্র হিসাবে নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে করছি।
বিদ্যালয়ে বর্তমানে ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যা যেভাবে বেড়েছে তাতে সকলের সমবেত প্রচেষ্টা থাকলেও শ্রেণীকক্ষের অভাবে সুষ্ঠ পঠন-পাঠন ও শরীর চর্চা ব্যাহত হচ্ছে। তবুও সমস্ত বাধা বিপত্তি কাটিয়ে উঠতে শিক্ষক-শিক্ষিকা, ও শিক্ষাকর্মীবৃন্দ, বর্তমান পরিচালন সমিতি, ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক সদা সচেষ্ট। বর্তমানে ছাত্রছাত্রীদের সু-স্বাদু খাবার পরিবেশন ও মাঝে মধ্যে মরশুমি ফল পরিবেশিত হচ্ছে। ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সুষ্ঠভাবে খাদ্য পরিবেশনের জন্য ছাদের উপর টিনের শেড নির্মাণ করা হয়েছে ও আরো একটি ছাদে শেড নির্মাণের কাজ চলছে। পরিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। লাইব্রেরীকে নবরূপে সাজানোর কাজ চলছে। ছাত্র-ছাত্রীদের আধুনিক পরিচয় পত্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের নিজস্ব Website তৈরি করা হয়েছে ভর্তি প্রক্রিয়া সুষ্ঠভাবে পরিচালনার জন্য। বিদ্যালয় ভবনকে সংস্কার করে নবরঙে সুসজ্জিত করার কাজ চলছে। ২০২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে বিদ্যালয়ে এই প্রথম দুটি বিষয়ে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ চালু হয়েছে। বিদ্যালয়কে নজরদারির মধ্যে রাখতে CC-TV লাগানো হয়েছে। আগামী দিনে শৌচাগার গুলি কে নবরূপ প্রদান করার পরিকল্পনা রয়েছে এবং জলনিকাশী ব্যবস্থাকে সুচারু করতে হবে।
বহুদিন থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে শৃঙ্খলাবোধের অভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিদ্যালয়ের মধ্যে যত্রতত্র গুটকার পিক ফেলা, মোবাইল ব্যবহার, বিদ্যালয়ের পাখা নষ্ট করা, টিউবলাইট, জানালা দরজার পাল্লা ভাঙ্গা, জলের কল নষ্ট করা ইত্যাদি বিভিন্ন অপকর্ম চোখে পড়ছে। বিশেষ করে শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মী বৃন্দকে যথাযোগ্য সম্মান না দেওয়া। শিক্ষক-শিক্ষিকা গণ হলেন শিক্ষাগুরু, আমি আশাকরি আগামীতে স্নেহের ছাত্র-ছাত্রীরা এ বিষয়ে সচেষ্ট হবে। এই বিষয়ে আমি বিশেষভাবে অনুরোধ করবো ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবক- অভিভাবিকাগণ কে যাতে তাঁরা এ বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন, যাতে শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীবৃন্দের সাথে সুমধুর সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
আজকের দিনে যেভাবে সোশ্যাল মিডিয়া ছাত্র-ছাত্রীদের গ্রাস করছে ও ধূমপানে আসক্ত হচ্ছে তাতে প্রকৃত গঠনমূলক ও অসাম্প্রদায়িক মনোভাব এবং উদার দৃষ্টিভঙ্গি ছাত্র-ছাত্রীদের গড়ে তুলতে শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিভাবক-অভিভাবিকাবৃন্দ এবং সর্বস্তরের শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গকে এগিয়ে আসতে হবে। মাঝেমাঝে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের পঠন-পাঠন ও শৃঙ্খলার বিষয়ে খবর নেওয়া সহ বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে অভিভাবক-অভিভাবিকাগণের সক্রিয় সহযোগিতা একান্ত কামনা করি। আসুন আমরা সকলে মিলে আমাদের এই সু-প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে উন্নয়নের চরম শিখরে পৌঁছে দিই। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন-এই কামনা করি।
ধন্যবাদান্তে
সেখ লতিফুদ্দিন
সভাপতি
বিদ্যালয় পরিচালক সমিতি
সাউথ সাঁকরাইল হাই স্কুল(উ: মা:)